বর্তমান যুগে অপ্রিয় সত্য কথা বলার মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিইও বা ম্যানেজারদের আশে-পাশে নির্জলা সত্য কথা বলা লোকের অভাব আরও বেশি। এর অনেকগুলো কারণ আছে। মানুষ স্বভাবতই চায় তার সিনিয়রদের বা বসদের ভালোবাসা এবং প্রশংসা পেতে। কিছু মানুষ আছে যারা কষ্ট করে তাদের কর্মক্ষমতা বা সততা দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করতে চায় না। তার বেছে নেয় ভালোবাসা অর্জনের অন্য উপায়। তৈল মর্দনের মতো কুৎসিত পথ। এই শ্রেণীর কর্মী কথায় কথায় বুঝে, না বুঝে ইয়েস স্যার, হ্যাঁ স্যার এবং জ্বি স্যার বলতে থাকে। এক কথায় ওরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাপর তোষামোদ করেই চাকুরী টিকিয়ে রাখে। বস কোন আইডিয়া শেয়ার করলে তা ঠিকমতো না শুনেই, না বুঝেই বলে উঠে, দারুণ স্যার, অসাধারণ আইডিয়া। এরা কখনো সত্যি কথা বলে না। বস একটা মারাত্মক ভুল কথা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতি হবে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বুঝেও প্রকাশ করে না। তারা মনে করে বসের মতামতের বিরুদ্ধে গেলেই যদি বস অসন্তুষ্ট হন। বসের বিরুদ্ধে গিযে নিজের ক্ষতি করে লাভ কি? তারচেয়ে বরং প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি হোক।
এই তোষামোদকারী কর্মীরা কখনো কোন ভালো পরামর্শ দেবে না। তাদের মেধা কোম্পানীর উন্নয়নে কখনোই ব্যয় হয় না। বেশি ব্যয় হয় বস কি শুনতে পছন্দ করেন এমন বাক্য এবং শব্দ খুঁজতে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের ‘নো’ বলার সাহস আছে তাদেরকে এই পদে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয় না। এইসব ইয়েস ম্যান রয়েছে কম বেশি সব প্রতিষ্ঠানেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বস, সিইও এবং ম্যানেজাররা মোটা বেতন দিয়ে এসব ইয়েসম্যানদের রাখে। তাদেরও ভালো লাগে এই ইয়েসম্যানদের। শুধু তাদের বলা বাক্যের সাথে ‘ইয়েস’ শব্দটা জুড়ে দিতেই এই লোকদের রাখা হয়। অবাক করা বিষয় হলো এসব ইয়েসম্যানরা অফিসে চলাফেরা করে বীরদর্পে। তাদের প্রধান দুটি বড় কাজ হলো বসকে তোষামোদ করে অধিনস্তদের শোষন করা, আর তা করতে গিয়ে ভালো কর্মীদের ঠকানো। অবশ্য এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলারও সাহস রাখে না। এরা সহজেই মালিকদের মুগ্ধ করতে পারেন বলে প্রভাব বিস্তার করে রাখেন অফিসে।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে মালিকরাও দোষী কম না। আজকালকার সিইও বা ম্যানেজাররা একটু লেজুড়বৃত্তি এবং তোষামোদ পছন্দ করেন। নিয়োগ বোর্ডেই তারা বুঝে নেন কারা হতে পারবেন জ্বি স্যার, আপনি যা বলেন তাই সবচেয়ে বড় সত্য এই ধরনের মানুষ।
সত্যের পথে ন্যায়ের সাথে থাকা মানুষদের তাই চাকরি জুটতেই অবস্থা খারাপ। কোনভাবেই যদি কর্তারা বুঝতে পারেন এ তো সব ব্যাপারে ইয়েস ইয়েস বলবে না, তাহলে ক্রস । তাকে নেয়া যাবে না। শুরুতেই বোল্ড। নো এন্ট্রি। নো জব। নো ভ্যাকান্সি।
প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করতে কর্তা ব্যক্তিদের অবশ্যই এই ইয়েসম্যানদের এড়িয়ে চলতে হবে। বুঝতে হবে এইসব জ্বি বস মার্কা লোক যাদের সত্য, মিথ্যা, উচিত, অনুচিত যাচাই করার মত মেধা বা সাহস নেই তাদের দ্বারা কোম্পানির ক্ষতি ছাড়া উন্নতি সম্ভব না। সেক্ষেত্রে বরং ‘নো’ ম্যানরাই পারে তাদের সত্য, মিথ্যা, উচিত, অনুচিত যাচাই করার মত মেধা ও সাহস দিয়ে কোম্পানির উন্নতি করতে। আর তাই সত্যের সাথে মঙ্গলের সাথে থাকা উচিত।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। কিন্তু শিক্ষিত এসব মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিচ্ছে না তেমন কেউ। বেকারত্ব বাড়ছে গাণিতিক হারে। আর তাই চাকরির বাজারে ঘুরে ঘুরে হতাশায় ডুবে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। বুদ্ধি আছে, শ্রম দেওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু পথ চেনা নেই। তাই শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে নানা সামাজিক অপরাধের মধ্য দিয়ে। পরিবারেও বাড়ছে অশান্তি। মুক্তির পথ জানা নেই, কিন্তু মুক্তি চাই। আমরা luckyideabd.com জানাচ্ছি আপনাকে সেই হতাশার জগৎ থেকে মুক্তির পথ। আমাদের ভুবনে আপনাকে স্বাগত।
আরো পড়ুন