একটি গল্প দিয়ে এই লেখাটা শুরু করি, তামিম এন্টারপ্রাইজের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আজাদ। নিজের যোগ্যতাবলে অল্প দিনেই কোম্পানীতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে পেরেছেন। কোম্পানীর স্বত্তাধিকারী, সিইও সবাই তাকে পছন্দ করেন। এবার কোম্পানীর বড় একটা দায়িত্ব পড়েছে তার উপর। কোম্পানীর নতুন একটা প্রজেক্ট তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করবে। সাভারে একশ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে নতুন প্রপার্টি। পুরো কাজের দায়িত্ব পাওয়ার পর আজাদ দারুণ খুশী হয়েছিলেন। সব কাজ বুঝে নিয়ে ভালোভাবেই তার দায়িত্ব পালন করতে থাকলেন।
একবার সাপ্তাহিক হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখেন ২০ হাজার টাকার ঘাটতি। এ সপ্তাহে কোম্পানি থেকে তাকে দেওয়া হয়েছিলো ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। তিনি খরচ করেছেন ৪ লাখ টাকা। তার কাছে অবশিষ্ট আছে ২০ হাজার টাকা। বাকি বিশ হাজার টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হয়েছে তা তিনি বুঝতে পারলেন না। বিষয়টা তাকে চিন্তিত করে তুললো। অফিসের একটা টাকাও এদিক সেদিক হওয়ার কোন উপায় নেই। এতোগুলো টাকার ঘাটতি তিনি কিভাবে পূরণ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় রাতে ভালো ঘুম হলো না। পরে বিষয়টি অফিসে গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ অফিসে জানাজানি হলে তার দীর্ঘ দিনের গুডউইল নষ্ট হয়ে যাবে। ভাবলেন যে কোনভাবে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেবেন। অন্য উপায়ে ঘাটতি পূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আজাদকে আর দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। ল্যান্ড প্রপার্টির দায়িত্বে থাকা একজন ঠিকাদার তাকে বিকল্প পথ দেখালেন। এতে আজাদের ২০ হাজার টাকার ঘাটতি তো পূরণ হলোই বাড়তি আয় হলো আরো কিছু টাকা। ঠিকাদারও খানিকটা লাভবান হলেন। ঘাটতি পূরণের বিকল্প পথটা একবার চেনার পর আজাদ প্রতিবার সে পথে হেঁটেছেন। এ পথে হাঁটতে তার বন্ধুর অভাব হয়নি।
মাস খানেক এভাবে চলার পর আজাদের ভেতর এক ধরণের পরিবর্তন লক্ষ করলেন অফিসের সিইও। এরপর আজাদের গতিবিধির প্রতি কড়া নজর রাখলেন। এরপর যা ঘটলো- আজাদের বিকল্প পথের কর্মকান্ড অফিসে জানাজানি হলো। অতপর চাকরিচ্যুত।
এমন ঘটনা বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি নানান অফিসে প্রতিনিয়তই ঘটছে। এর শুরুটা হয় অনেক সময় নিজের ক্ষতি পোষানোর মনোভাব থেকে। পরে তা বিস্তৃতি লাভ করে। লোভ বাসা বাঁধে মনে। এতে অফিস ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর সাথে সম্পর্কিত কর্মকর্তা সাময়িক লাভবান হলেও পরে তিনিও সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হন। পেশাগত কাজে স্বচ্ছতা এবং অধিনস্থদের প্রতি উদার মনোভাব থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কম থাকে। আজাদের কথাই ধরা যাক। আজাদ যদি শুরুতেই অফিসে তার সমস্যার কথা খুলে বলতেন তাহলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। আবার কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যদি এসব ব্যাপারে খোলামেলা ও উদার হতেন তবে আজাদও এ পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতেন না। কোন অফিসের কর্মকর্তাদের প্রতি উচ্চপদস্থজন বেশী আন্তরিক হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বচ্ছতা জন্ম নেয়। অনেক সময় জবাবদিহিতা, ভয় থেকেই কর্মকর্তাদের ভেতর দুর্নীতি প্রবণতা বেড়ে যায়। কর্মকর্তাদের দুর্নীতিপ্রবণতা ঠেকাতে উচ্চপদস্থজনের আন্তরিক ও উদার মনোভাব খুব জরুরী। তারপরও যদি কোন দুর্নীতিবাজ কর্মী ধরা পড়ে তবে অবশ্যই তাকে মনিটর করার দায়িত্ব যিনি পালন করছেন তাকেও ছাড় দেয়া যাবে না। কারণ খেয়াল রাখতে হবে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীর জন্য যেন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রয়োজনে তাকে বাদ দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। কিন্তু শিক্ষিত এসব মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিচ্ছে না তেমন কেউ। বেকারত্ব বাড়ছে গাণিতিক হারে। আর তাই চাকরির বাজারে ঘুরে ঘুরে হতাশায় ডুবে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। বুদ্ধি আছে, শ্রম দেওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু পথ চেনা নেই। তাই শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে নানা সামাজিক অপরাধের মধ্য দিয়ে। পরিবারেও বাড়ছে অশান্তি। মুক্তির পথ জানা নেই, কিন্তু মুক্তি চাই। আমরা luckyideabd.com জানাচ্ছি আপনাকে সেই হতাশার জগৎ থেকে মুক্তির পথ। আমাদের ভুবনে আপনাকে স্বাগত।
আরো পড়ুন